রিসার্চ রিপোর্টার,
বিশ্বব্যাপী “অর্গ্যানিক ফ্যাশান”
শব্দটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । পরিবেশবান্ধব ও
সহজলভ্য আনারসের পাতার আশ হতে সংগ্রহীত “পিনা ফাইবার” দ্বারা আগামী বিশ্বের পোশাক
তৈরিতে বানিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও
গবেশনা ইন্সটিটিউট (নিটার) এর ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী ও গবেষক কাজী হাসানুল হক ।
বাংলাদেশের বস্ত্র প্রকৌশল
শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত “Textile Talent Hunt (TTH)” ৫ম আসরের চ্যাম্পিয়ন কাজী মোঃ হাসানুল হক এর গবেষনার বিষয় ছিলো
“Development Of Simple PINEAPPLE Leaf Fibre (PALF) Extraction
Machine, Dyeing, Characterization And The Commercial Opportunity Of PALF In
Bangladesh”
পুরষ্কার হাতে গবেষক |
গবেষনার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো
,
২০২০ সাল নাগাদ আগামী বিশ্বের
পোশাক তৈরি কাচামাল তথা ফাইবারের চাহিদার ১০২.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন যোগান দিতে গিয়ে
ঘাটত দাঁড়াবে প্রায় ৫.৩ মেট্রিক টন । কিন্ত তা যদি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সিনথেটিক
ফাইবার দিয়ে না পূরন করে পরিবেশবান্ধব ফাইবার যেমন, কটন, উল, সিল্ক, পাট ইত্যাদি
দ্বারা পূরন করতে যায় তবে প্রয়োজন হবে আরো আবাদী জমীর । যার যোগান দিতে গিয়ে কমে
আসবে খাদ্য শষ্যের জমীর পরিমান ।
আনারস এমনই একটি ফল যা একসাথে এই
দুই প্রয়োজন মেটাতে পারে । আনারস যেমন ফলের যোগান দেয়, ঠিক তেমনই এর পাতা হতে প্রাপ্ত ফাইবার দিয়ে আধুনিক ও
রুচিশীল পোশাক তৈরি করা যায় ।
উল্লেখ্য যে পিনা ফাইবারের মধ্যে আলফা সেলুলসিক , হেমি সেলুলসিক ও উল্লেখযোগ্য পরিমানে লিগ্নিন রয়েছে ।
পিনা
ফাইবার বা আনারস ফাইবারের বৈশিষ্ঠ্যঃ
পিনা ফাইবার |
আনারস পাতা থেকে পিনা ফাইবার তৈরির
প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে তিনি উল্লেখ্য করেন,
পিনা ফাইবারকে দুইভাবে নিষ্কাশন করা হয় ।
প্রথমত হাত দ্বারা নিষ্কাশন করা হলে
“প্রথমে আনারসের পাতা ধুয়ে শুকাতে হয় । এরপর হাতে দিয়ে
ছোট সিরামিক প্লেট দ্বারা আঁচড়িয়ে ফাইবার নিষ্কাশন করা হয়। এভাবে একজন শ্রমিক দিনে
সর্বোচ্চ ৫০০ পাতাকে ফাইবারে রূপান্তর করতে পারে।
আর যদি মেক্যানিক্যালি নিষ্কাশন করা হয়
তবে সেই মেশিনে ৩ প্রকারের রোলারে থাকতে হবে।
1) Feed Roller
2) Leaf
Scratching Roller
3) Serrated Roller
এক্ষেত্রে প্রথমে আনারসের পাতাকে Feed
Roller দিয়ে চালনা
করলে তা Leaf Scratching Roller পৌছায় । তখন পাত্র
উপেরর waxy layer গুলো Scratching Roller
এর ব্লেড দ্বারা আঁচড়ানো হয় ফলে বেরিয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত “পিনা ফাইবার”
আনন্দের বিষয় হল গবেষক নিজেই একটি Simple
Proto- Type Extraction Machine বানিয়েছেন ।
গবেষকের উদ্ভাবিত Simple Proto- Type Extraction Machine |
শুধু তাই নয় তিনি ফাইবারের Scouring,
Bleaching এবং Reactive Dye ও Basic Dye দিয়ে Dyeing (রঙ
করা) করার পদ্ধত্বী ও তার রেসিপিও দিয়েছেন ।
নিটারের ওয়েট প্রোসেসিং ল্যাবে গবেষনা চলাকালীন Dyeing করা পিনা ফাইবার |
বাংলাদেশে পিনা ফাইবারের ভবিষ্যত নিয়ে
তিনি জানান যে, বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার হেক্টোর জমিতে প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার টন
আনারস উৎপাদন হচ্ছে যার উৎপাদন হার প্রায় ২১ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টরে (২০১১
হিসাবে) ।
প্রতিটি আনারস গাছে ৪২ থেকে ৬০ টি পাতা থাকে যা গড়ে ১.২৫ মিটার
লম্বা হতে পারে । সে হিসেবে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি গাছে প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা পাতা
থাকছে ফাইবার উতপাদনের জন্য ।
যদি দেশে বানিজ্যিকভাবে পিনা ফাইবার
উৎপাদন ও তা থেকে টেক্সটাইল সামগ্রী প্রস্তুতির উদ্যোগ নেয়া হয় তবে তা আমাদের
গ্রামীন জনগষ্ঠির আর্থ সামাজিক
উন্নয়ন, বেকারত্ব লাঘব , বিশেষ করে গ্রামীন
দরিদ্র নারীদের কর্মস্থানের সুযোগ করে দিবে । পাশাপাশি ফাইবার টেক্সটাইল
ইন্ড্রাস্ট্রির কর্তিক ফাইবার আমদানীতে বিদেশী নির্ভরতাও কমে আসবে ।
তিনি
একটি SWOT ANALYSIS এর মাধ্যমে এর সম্ভাবনা ও সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন ।
উদাহরন
হিসেবে তিনি উল্লেখ্য করেন যে, বর্তমানে
ফিলিপাইনে বানিজ্যিকভাবে পিনা ফাইবারের তৈরি পোশাক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে । তারা শুধুমাত্র পিনা ফাইবার অথবা এর সাথে সিল্ক,
কটোন, লিলেন অথবা বিভিন্ন সিনথেটিক ফাইবার
ব্লেন্ড করে নানান ধরনের অত্যাধুনিক ও জাকজমকপূর্ন পোশাকদি তৈরি করেছে যার মধ্যে 'barong tagalog' নামক পোশাক অন্যতম ।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে বর্তমানে অজিয়েট গ্রুপ ও
Fiber Resource Center (FRC) সল্প পরিসরে
পিনা ফাইবার উৎপাদন ও এর পোশাক তৈরিতে সক্ষম হয়েছে ।
পিনা ফাইবার দ্বার তৈরি পোশাকের একটি প্রদর্শনী |
গবেষক পরিচিতি
নামঃ কাজী মোঃ হাসানুল হক
সদস্যঃ AATCC
সাভার কোরেস্পোন্ডেন্টঃ apparelbangladesh24.com
সহ –প্রতিষ্ঠাতাঃ Hexa-tex Ultimate
বি এস সিঃ ওয়েট প্রোসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং (২য় ব্যাচ)
জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেশনা ইন্সটিটিউট (নিটার)
প্রতিবেদক
৪র্থ ব্যাচ
জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেশনা ইন্সটিটিউট (নিটার)
ConversionConversion EmoticonEmoticon